পদ্মা সেতুর সবশেষ আপডেট । To Day Padma Bridge Latest News
পদ্মা সেতুর সবশেষ আপডেট । To Day Padma Bridge Latest News
এ যেন কোনো সেতু নয়, উড়ন্ত ডানা। এ যেন স্বপ্নের বাস্তব ঠিকানা।এই মে ২০২২ সালে এসে,প্রমত্তা পদ্মার বুকে, পদ্মাসেতুকতটা রূপ পেলো, সে চিত্রই তুলে ধরবো।আমার বিশ্বাস, দর্শকরাও মুগ্ধ হবেন স্বপ্নের এই সেতুর একেবারে নতুন ছবি দেখে।পদ্মাবহুমুখী সেতুর মূল সড়ক অংশে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে।ফলে সেতু এখন যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।অনেক জল্পনা-কল্পনার পর,আপাতত সেতুটির সড়ক অংশ চালুর জন্য যে তারিখটি নির্ধারিত হয়েছে,তা ২৫ জুন, শনিবার ২০২২।দেখতেই পাচ্ছেন, সেতুতে বাতি বসানোর কাজও শেষ হয়েছে।পদ্মা সেতুতে দুই ধরনের আলোকসজ্জার ব্যবস্থা থাকবে।একটি হলো যানবাহনের চলার পথ আলোকিত করতে স্ট্রিট লাইটিং;
আরেকটি কোনো উৎসব কিংবা জাতীয় কোনো দিবসে.পুরো সেতু নানা রঙে আলোকসজ্জা করার স্থায়ী ব্যবস্থা অর্থাৎ আর্কিটেকচারাল লাইটিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে । দেশের এই অন্নতম জাতীয় স্থাপনা পদ্মা সেতু তে ।এখন ল্যাম্পপোস্টে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে।এই মে মাসের মাঝামাঝি কোনো একদিন,
হঠাৎ সন্ধ্যায়, তুমুল আলোয় হেসে উঠবে পদ্মার পার।নিশ্চয়-ই সে আলো দেখতে ছুটে আসবে আশপাশের অসংখ্য গ্রামের মানুষ পদ্মাসেতুর চলাচলের পথের দুই পাশে । সব মিলিয়ে ৮৩৬টি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছে।সেতুটির চার লেন।মাঝখানে রোড ডিভাইডার। সেতুর দু’পাশে প্যারাপেট ওয়াল।এখন আর যেটুকু কাজ বাকি আছে, তার মধ্যে রয়েছে সেতুতে সাইন, সংকেত ও মার্কিং বসানোর কাজ।এটিও এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
এছাড়া সেতুর সীমানা দেয়ালের ওপর স্টিলের রেলিং বসানো হবে।এই মে মাসেই এসব কাজ হয়ে যাবে বলে আশা। নির্মাণকাজ তদারকির সাথে যুক্তদের।বাকি যেটুকু কাজ থাকবে তা জুনের ২৫ তারিখের আগেইশেষ করবে কর্তৃপক্ষ।
পদ্মাসেতু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এজন্য ম্যুরাল ও ফলক নির্মাণের কাজ চলছে।মাওয়া ও জাজিরা দুই প্রান্তেই ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মিত হচ্ছে।সেই ম্যুরাল দুটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব টাকায় তৈরি এই সেতু দিয়ে । পারাপারে টোল দিতে হবে।এজন্য সেতুর দুই প্রান্তে আছে টোল প্লাজা।
সেতুতে যান চলাচলে কী পরিমাণ টোল দিতে হবে,তা নির্ধারণের শেষ পর্যায়ে আছে সেতু বিভাগ।তবে এরই মধ্যে সেতুর টোল হার চূড়ান্ত করার জন্যএকটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর চূড়ান্ত হবে এই টোল।প্রস্তাবিত টোল হার অনুসারে পদ্মা সেতু পারাপারে। বড় বাসে ২ হাজার ৪০০ টাকা। এবং মাঝারি ট্রাকে ২ হাজার ৮০০ টাকা লাগবে।
পদ্মা ফেরি পারাপার হতে যানবাহনের যে পরিমাণ টোল দিতে হয়,এর দেড়গুণ দিতে হবে সেতু দিয়ে পারাপারের জন্য।তবে ফেরি পারাপার হতে যে দীর্ঘ সময় লাগতো,সেতু পার হতে লাগবে মাত্র ১০ মিনিট।আশা করা হচ্ছে, এ মাসেই প্রস্তাবিত টোল হার অনুমোদন মিলতে পারে।এরপর প্রজ্ঞাপন জারি করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।আর টোল আদায় ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগও চূড়ান্ত করা হয়েছে।প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন (কেইসি)
ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)।এর মধ্যে কেইসি পদ্মা সেতু প্রকল্পে তদারক পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে।আর এমবিইসি মূল সেতু নির্মাণকাজের দায়িত্বে আছে।৬৯৩ কোটি টাকায় তাদেরকে পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগের দেয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, সেতুটিকে চলাচল উপযোগী করতে যা যা দরকার,প্রায় সব কাজই করা শেষ।তবে পদ্মাসেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প থেকে একটা প্রশ্ন উঠেছে,জুনে যান চলাচল শুরু হলে যে কম্পন তৈরি হবে,সে কারণে রেল অংশের ঢালাই কাজে সমস্যা তৈরি হতে পারে।সেক্ষেত্রে কিছুদিন যান চলাচল সীমিত রাখা।বা একটি নির্দিষ্ট ওজনের ওপরের যান চলাচলে আপাতত অনুমতি না দেয়া। ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ।.
গত এপ্রিল পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের মোট অগ্রগতি। পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,মূল সেতুর কাজ এগিয়েছে ৯৮ শতাংশ।নদী শাসনের কাজের অগ্রগতি ৯২ শতাংশ।সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ।মূল পদ্মাসেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।দুই প্রান্তের ভায়াডাক্ট বা উড়ালপথ যোগ করলে আরো ৩.৬৮ কিলোমিটার হয়।সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯.৮৩ কিলোমিটার।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৭ হাজার ৩৪১ কোটি টাকার মতো।এই সেতুর দিকে তাকিয়ে আছে পুরো দেশ।
তবে সবচেয়ে বেশি অপেক্ষা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের। ২১ জেলার কোটি কোটি মানুষের।
সেতু চালু হলে দৈনিক প্রতিদিন ২৪ হাজার যানবাহন চলবে পদ্মাসেতু দিয়ে।এ সেতুর মাধ্যমে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে।এই সেতু ঘিরে একদিকে চলাচল যেমন সহজ হবে,পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু।সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে।
আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।পদ্মাসেতুর চেয়েও অনেক বেশি টাকার প্রকল্প বাংলাদেশে থাকলেও,এই সেতু বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অনেক উন্নত করেছে।ভবিষ্যতেও করবে।এই সেতু চালুর মধ্য দিয়েই দেশের প্রতিটি বিভাগ। রাজধানীর সাথে সরাসরি সড়ক সংযোগে আসবে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় ৪৪ হাজার বর্গকিলোমিটারে বসবাস করা। ৩ কোটির বেশি মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে।যার সুফল পাবে সারা দেশের মানুষ। আজ এ পর্যন্তই।এই সেতু, সড়ক বা সব অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে জনগণের জন্যই।
এসব ব্যবহার করে আমি আপনি আমরাই। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পৌঁছাবো। ব্যবসা-বাণিজ্য করবো।আমাদের সন্তানরা চোখ মেলেই দেখবে বিশাল বিশাল সড়ক, সেতু, টানেল।তাদের স্বপ্ন বড় হবে। আসুন, তাদের স্বপ্নকে আরো বড় করি।যত্ন করি এসব জাতীয় স্থাপনা। সবাই ভালো থাকবেন।